নারী ধর্ম

নারীজাত অভিনয়ে বড়ই পারঙ্গম । আর কে না জানে, অভিনয়ের আরেক নাম ছলা-কলা !

এক জন মেয়ে যখন পড়তে বা কাজে বাইরে যায়, বিভিন্ন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে, কিন্তু বাড়িতে এসে সব কথা চেপে হাসিমুখে বুঝিয়ে দেয় সে ভাল আছে, মা-বাবাকে আশ্বস্ত রাখে । নয়তো চাপে জর্জরিত মা-বাবা মেয়ের নিরাপত্তার চিন্তায় আরো অসুস্থ হবে । সংসারের স্বার্থে মেয়েটিকে এটুকু অভিনয় করতেই হয় ।

মেয়েটা বাড়ির নানা কাজ সেরে যখন প্রেমিকের সাথে দেখা করতে যায়, প্রেমিককে খুশি রাখতে তাকে হাসতে হয়, বুকের দুঃখ লুকিয়ে সুখের গল্প করে ছেলেটির চোখে খুশির ঝিলিক দেখে তৃপ্তি পায় । সোজা কথায়, প্রেমিকের মন যুগাতে মেয়েটিকে সুখের অভিনয় করতে হয় – পরিবার ও সমাজের চোখ-রাঙ্গানি বা কান-কথা বলতে পারে না ।

বাঙালি মধ্যবিত্ত তরুণী মেয়েরা পরিবারে উপেক্ষিতা, বাপের ঘুম-হরা বোঝাস্বরূপ । কিন্তু সে রাগ দেখাতে পারে না, হাসি-হাসি মুখে বড় ভাইয়ের আদেশ, বয়োজ্যেষ্ঠদের নির্দেশ, ছোটদের আবদার মেটাতে হয় । নিজের ভালো-লাগা নিরবে হত্যা করে ‘কনে-দেখা বেলায়’ লক্ষ্মী হয়ে বসতে হয় । স্পষ্টবাদী মেয়েটিকে সরস্বতীর মত বিদ্যা-বুদ্ধি-বিনম্রতার অভিনয়ে পাশ করতে হয় – মা-বাপকে সুখী করতে ।

বিয়ের পর তাকে দুর্দান্ত অভিনেত্রী হতে হয় – কাজে, কর্মে, বাকপটুতায়, উপস্থিত বুদ্ধিতে । স্বামীর উপরোধে শ্বশুরকুলের মন জয় করতে হয়, সবার কটুকথা দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে স্বামীপ্রবরকে বুঝাতে হয় ‘তোমাকে পেয়ে আমি বড্ড সুখী !’ শ্বশুরবাড়ির সবাইকে বোঝাতে হয়, আমি ফেলনা ছিলাম না, মা-বাপের শত আদরের (?) মেয়ে ছিলাম, খুব ব্যস্ত বিধায় খবর নিতে পারেন না; বড় ভাইয়ের পড়ার চাপ, চাকরির চিন্তা, তাই আসতে পারেন না ।

বাপের বাড়ি গেলে দুদিন না যেতেই ফিরবার জন্য তোড়জোর করে বুঝাতে হয়, ও বাড়ির বড়ো আদরের বৌমা আমি । সুদক্ষ অভিনেত্রীর মত বানিয়ে বানিয়ে বউ-সোহাগের গল্প করতে হয় – দেখো আমি কত ভাগ্যবতী ! মা গো, তুমি কোন চিন্তা করো না । অনেক কষ্টে জমানো টাকা লুকিয়ে বাপকে দিয়ে স্বামীর হাতে চালান করে গরবিনী মেয়ে হতে কার না সাধ জাগে ?

সন্তানের কাছে এমন অভিনয় করতে হয়, যাতে সন্তান কভু মায়ের দুঃখে জল না ফেলতে পারে । বরঞ্চ সারাদিনের ক্লান্তিকর পরিশ্রমের পর স্বামী-সন্তানের সাথে রঙ্গ-তামাশা করে তাদের মন প্রফুল্ল রাখা বাঙালি মায়েদের চিরন্তন রূপ । সন্তানের উল্লসিত রূপ দেখতে মায়েরা ক্ষত-বিক্ষত পা নিয়ে নাচতেও দ্বিধা করে না ।

এমন অভিনেত্রী জীবন-সায়াহ্নে শেষ অকৃত্রিম অভিনয় (না কি ছেলে-ভুলানো ছলনা ?) করে বলে যায় ‘অনেক করেছো বাছারা । সকলের স্নেহ-প্রেম-শ্রদ্ধায় ধন্য মম জীবন ! যা পেয়েছি যা দেখেছি, তুলনা তার নাই ।’

কার্টেসি – নিরঞ্জন কুমার অধিকারী

Posted in Uncategorized | Leave a comment

নবান্ন উৎসব

indexবাংলাদেশ ষড় ঋতুর দেশ। ঋতুর আবর্তে মানুষ তথা জনজীবনকে প্রাকৃতিকভাবেই নাড়া দিয়ে যায় দেহ ও মনকে। শরতের কাঁশফুলের ছোঁয়া শেষ হতে না হতেই হেমন্তের আগমন ঘটে। কার্তিক ও অগ্রাহায়ণ দুই মাস নিয়ে হেমন্তকাল। ঋতুর চতুর্থ মাস হিসাবে এ ঋতুর শেষ দিকে শীতের আগাম বারতা নিয়ে আসে। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। বাঙালি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হিসাবে প্রতি বছর অগ্রাহয়ণ মাসেই মহা সমারোহে পালিত হয় বাঙালির প্রাণের “নবান্ন উৎসব”। শুধু বাংলাদেশে নয় পশ্চিমবঙ্গেও এ উৎসব পালিত হয়। নবান্ন= নব+অন্ন এর অর্থ ‘নতুন অন্ন’। ‘নবান্ন’ শব্দের সাথে ‘উৎসব’ শব্দটি যুক্ত হয়ে “নবান্ন উৎসব” হয়েছে। হেমন্তের শেষ দিকে যখন নতুন ধান বা আমন ধান কাটা হয় তখনই মূলত এই উৎসব পালিত হয়। তবে কোথাও কোথাও ভৌগোলিক কারণে এ উৎসব পালনে ভিন্নতা দেখা যায়। ‘মরা’ কার্তিকের দাড় পেরিয়েই দেখা পায় উৎসব নবান্নের। দারিদ্র্য ও হতাশা কাল পেরিয়ে আসে নতুন এক সকাল। অগ্রহায়াণের মৃদু মন্দ কুয়াশার চাদরে মোড়ানো শীতের আমেজ। সবুজ ঘাসের ডগায় রৌদ্রালোকিত শিশির বিন্দু। মাঠ ঘাট শস্যের মৌ মৌ গন্ধে গ্রামের পথ ভরে ওঠে। এর মধ্যে ধন্যে ধান্যে পুষ্পে ভরা এই বসুন্ধরায় মাঠে মাঠে ফসলের সমারোহ। কৃষিপ্রধান দেশ হিসাবে এ দেশের বেশিরভাগই লোকই কৃষির উপর নির্ভরশীল। কৃষিজীবী মানুষ এ সময় কুয়াশা মাখানো শীত উপেক্ষা করে শস্যক্ষেতে তাদের কষ্টে ফলানো ফসল সংগ্রহ করতে। শস্য সংগ্রহ করতে পারলেই যেন কৃষক আনন্দে মেতে উঠে। কৃষকের ঘরে ঘরে গোলাভরা ধানে ভরে ওঠে। শস্যের এই উৎসবই মূলত নবান্ন উৎসব। কৃষাণী বধুরা ঢেঁকিতে চাল গুড়া করে। তারা এ সময় খেজুরের গুড় মিশ্রিত নানা ধরনের নকশীপিঠা, চালের ফিরণী, পায়েশ করে থাকে। তারা এই নতুন ধানের পিঠা পরিবার পরিজন সহ প্রতিবেশিকে দেয়। এ উৎসবে হতদরিদ্র, মুটে মজুরাও বাদ পড়ে না। এ সময় গ্রামের চালচিত্রে এক অনাবিল আনন্দের আমেজ দেখা যায়। অমুসলিম রীতিতে নবান্ন অনুষ্ঠানের ‘নতুন অন্ন’ পিতৃপরুষ, দেবতা, কাক ইত্যাদিকে উৎসর্গ করে। কাককে এই খাদ্য নিবেদন করা নবান্নের অঙ্গ একটি বিশেষ লৌকিক প্রথা। লোকমতেÑ কাককে দেয়া মানেই এ অন্ন মৃতের আত্মাকে দেয়া। এই নৈবেদ্যকে বলে ‘কাকবলী’। হিন্দু শাস্ত্রমতে, নবান্ন শ্রাদ্ধ না করে অন্নগ্রহণ করলে পাপের ভাগী হতে হয়। এভাইে জাতি পরম্পরায় পালিত হয় বাঙালির অন্যতম ‘নবান্ন উৎসব’।



Posted in Uncategorized | Leave a comment

রবীন্দ্র ছোটগল্প ও পোস্টমাস্টার

‘ছোটগল্প’ শব্দটি উচ্চারণ মাত্রই আমাদের মনে যে নামটি ভেসে উঠে তা আর কারো না, নোবেল বিজয়ী বিশ্ববরেণ্য ছোটগল্পকার                           rrrrrrরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর(১৮৬১-১৯৪১)। এখনো পর্যন্ত তিনিই বাংলা ছোটগল্পের প্রথম এবং শ্রেষ্ঠ রূপকার। বলা বাহুল্য, বাংলা সাহিত্যের প্রায় সকল শাখাতেই তিনি সমগ্রপ্রসারী আর দিগন্তবিস্তারী সৃষ্টি প্রতিভা। ছোটগল্পের বিবেচনায় বাংলা সাহিত্যে তিনিই প্রথম সামাজিক ও পারিবারিক জীবনের সংকীর্ণ ওবহির্বিকাশের দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে জীবনের তলদেশে যে নিভৃত ফল্গুধারটি তা আমাদের দেখিয়ে দিলেন। তার ছোটগল্পগুলোতে মূলত মানব জীবনের সুখ দুঃখ, হাসি-কান্না, প্রেম ভালবাসা বিষাদময় বিচ্ছেদের এক পূর্ণ সুর উচ্ছলিত হয়েছে।

রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পগুলোর রচনা যে সময়টাতে আরম্ভ হয়, এবং জীবনের পর্বটিতে অধিকাংশ গল্পগুলো রচিত হয়, সেই উদ্ভব ও বিকাশের সময়ের প্রতি একটু লক্ষ্য রাখলে, তাঁর ছোটগল্পের উৎসটিকে, ধর্মটিকে, আরো ভালোভাবে বোঝা সম্ভব। তাঁর বেশিরভাগ গল্প রচিত হয়েছিল বাঙলা ১২৯৮ থেকে আরম্ভ করে ১৩১০ সালের মধ্যে। অবশ্য তার পরেও আরও কয়েকটি সুপ্রশিদ্ধ গল্প ১৩১৪ থেকে আরম্ভ করে ১৩২৫ সালের মধ্যেই বেশিমাত্রায় প্রবল। তাঁর একটি সুপ্রসিদ্ধ গল্প পোস্টমাস্টার ১২৯৮ সালে লেখা। এর কিছুদিন আগে থেকেই কবি জমিদারি দেখাশুনার ভার নিয়েছেন। তার দিন কাটে পদ্মার জলে নৌকায় ভেসে ভেসে সাজাদপুরে, শিলাইদহে। অপূ্র্ব আনন্দময়, বৈচিত্র্যে ভরপুর তার এই সময়কার জীবনযাত্রা। বাংলাদেশের একটি নির্জন প্রান্ত, তার নদীতীর, উন্মুক্ত আকাশ, বালুর চর, অবারিত মাঠ, ছায়া-সুনিবিড় গ্রাম, সহজ অনাড়ম্বর পল্লীজীবন, দুঃখপীড়িত অভাবে ক্লিষ্ট অথচ শান্ত সহিষ্ণু গ্রামবাসী, সবকিছুকে কবির চোখের সামনে মেলে ধরেছে, আর কবি বিমুগ্ধ বিষ্ময়ে, পুলকিত শ্রদ্ধায় ও
বিশ্বাসে তার অপরিসীম সৌন্দর্য আকণ্ঠ পান করছেন। এমনি ভাবে তিনি গ্রামের সহজ সরল মানুষের সাথে তিনি একাত্ত্বতা ঘোষণা করেছেন। এর মাঝেই তার ভাব-কল্পনার মধ্যে আপনা আপনি গল্পগুলো রূপ পেতে আরম্ভ করল, তুচ্ছ ক্ষুদ্র ঘটনা ও ব্যাপারকে নিয়ে বিচিত্র সুখদুঃখ অন্তরের মধ্যে মুকুলিত হতে লাগল।এ সময় সাজাদপুরে একজন পোস্টমাস্টারের আগমন উপলক্ষে পোস্টমাস্টার গল্পটির সৃষ্টি হলো।

পোস্টমাস্টার গল্পটি প্রথম দিককার গল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম। একটি স্বজনহারা নিঃসহায় গ্রাম্যবালিকার স্নেহলোলুপ হৃদয় আসন্ন স্নেহবিচ্যুতির আশঙ্কায় কী সকরুণ অশ্রুসজল ছায়াপাত করেছে এই গল্পটির উপর!এছাড়াও গল্পে গল্পে দুই অসম স্তরের নরনারীর হৃদয় সম্পর্কের রহস্যকে শিল্পী উপলদ্ধি করতে চেয়েছেন। রতন যে সমাজ তথা পরিবেশ থেকে রস সঞ্চয় করে স্ফীত হয়েছে সেই পরিবেশে পোস্টমাস্টারের দশা জলের মাছকে ডাঙায় তুললে যেমন হয় তেমনি।পোস্টমাস্টার নব্য ইউরোপীয় সভ্যতাপুষ্ঠ এক যুবক আর অন্যদিকে রতন এক অনাথিনী বালিকা। রতন যেভাবে পোস্টমাস্টারকে আপন করে নিয়ে নিজের হৃদয়ে স্থান দিয়েছে তেমনি কি পোস্টমাস্টার রতনকে পেরেছে? তবু ঘটনাক্রমে পোস্টমাস্টারের কাজের দায়িত্ব রতনের কাঁধে বর্তায়। রতন কাজ করে এবং রতনকে পোস্টমাস্টার ডাকিতেন-
রতন। রতন দ্বারে বসিয়া এই ডাকের জন্য অপেক্ষা করিয়া থাকিত কিন্তু এক ডাকে ঘরে আসিত না; বলিত, কি গা দাদাবাবু, কেন ডাকছ।

পোস্টমাস্টার : তুই কী করছিস।

রতন : এখনই চুলো ধরাতে যেতে হবে – হেঁশেলের

পোস্টমাস্টার একাকী হওয়ায় মাঝে মাঝে আহার, পারিবারিক বিষয়াশয় নিয়ে রতনের সাথে কথা হয়। প্রবাসে পোস্টমাস্টার তার পরিবারের মা দিদি দাদার কথা বলতেন। রতনও এক সময় পোস্টমাস্টারের ন্যায় চির পরিচিতের ন্যায় উল্লেখ করত।
পোস্টমাস্টারের হাতে যখন কাজ থাকত না তখন একাকীত্বের যন্ত্রণায় বিষন্ন তখন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া ডাকিতেন-

রতন। রতন তখন পেয়ারাতলায় পা ছাড়াইয়া দিয়া কাঁচা পেয়ারা খাইতেছেল; প্রভুর কণ্ঠস্বর শুনিয়া অবিলম্বে ছুটিয় আসিল হাপাইতে হাপাইতে বলিল ডাকছ? একদিন হঠাৎ করিয়া রতনের ডাক কমিয়া আসিল। কিন্তু রতন সেই ডাক শুনবার জন্য
দ্বারের কাছে অপেক্ষায় বসিয়া থাকত। অপেক্ষার প্রহর গুনিতে গুনিতে যখন ফিরিয়া যাইবার উপক্রম হইল তখন সহসা শুনিতে পেল, রতন। তাড়াতাড়ি ফিরিয়া গিয়া দাদাবাবু ঘুমুচ্ছিলে? পোস্টমাস্টার কাতরস্বরে বলিলেন- শরীরটা ভাল বোধ হচ্ছে না। দেখ তো আমার কপালে হাত দিয়া।

এরপরই রতন আর ছো্ট্ট বালিকা রইল না। তখন সে জননীর পদ অধিকার করিয়া, বৈদ্য ডাকিয়া আনিল, যথাসময়ে বাটিকা খাওয়াইল সারা রাত্রি শিয়রে জাগিয়া রহিল আপনি পথ্য রাধিয়া দিল। এবং শতবার করিয়া জিজ্ঞাসা করিল হাগো দাদাবাবু একটু ভাল বোধ হচ্ছে কি?
সুস্থ হয়ে পোস্টমাস্টার সিদ্ধান্ত নিল হয় বদলি না হয় চাকুরী ছাড়িয়া চলে যাবে।

রতন। কোথায় যাচ্ছ দাদাবাবু
পোস্টমাস্টার। বাড়ি যাচ্ছি
রতন। আবার কবে আসবে
পোস্টমাস্টার। আর আসব না।
এমনি করিয়া পোস্টমাস্টার নতুন পোস্টমাস্টারকে দায়িত্ব দিয়ে বিদায়ের উদ্যোগ নিলেন।

যখন নৌকায় উঠিলেন এবং নৌকা ছাড়িয়া দিল, বর্ষাবিস্ফারিত নদী ধরণীর উচ্ছলিত অশ্রুরাশির মতো চারি দিকে ছলছল করিতে লাগিল, তখন হৃদয়ের মধ্যে অত্যন্ত একটা বেদনা অনুভব করিতে লাগিলেন– একটি সামান্য গ্রাম্য বালিকার করুণ
মুখচ্ছবি যেন এক বিশ্বব্যাপী বৃহৎ অব্যক্ত মর্মব্যথা প্রকাশ করিতে লাগিল।একবার নিতান্ত ইচ্ছা হইল, “ফিরিয়া যাই, জগতের ক্রোড়বিচ্যুত সেই অনাথিনীকে সঙ্গে করিয়া লইয়া আসি”- কিন্তু তখন পালে বাতাস পাইয়াছে, বর্ষার স্রোত খরতর বেগে বহিতেছে, গ্রাম অতিক্রম করিয়া নদীকূলের শ্মশান দেখা দিয়াছে- এবং নদীপ্রবাহে ভাসমান পথিকের উদাস হৃদয়ে এই তত্ত্বের উদয় হইল, জীবনে এমন কত বিচ্ছেদ, কত মৃত্যু আছে, ফিরিয়া ফল কী। পৃথিবীতে কে কাহার।

গল্পে অনাথিনী রতন তার চরিত্রের মধ্যে দিয়ে শাশ্বত নারী সত্তার যে পরিনতি তা অত্যান্ত প্রগাঢ় ভাবে দেখা দেয়। নারী হৃদয়ের যে কান্না তা পাঠকের হৃদয় অরণ্যে এক সুক্ষ দাগ কেটে গেছে। রতন সেই পোস্টআপিস গৃহের চারিদিকে অশ্রুজল ভাসিয়া ঘুরে ঘুরে বেড়িয়েছে। রতনের এই অশ্রুজলের পেছনে বাস্তবে কোন সামাজিক অথবা সাংসারিক ব্যাপার ছিল না। সমস্থ বেদনার উতস কেন্দ্র হৃদয় রহস্যের  গভীরে প্রোথিত। নব্য ইউরোপীয় সভ্যতা দীক্ষিত পোস্টমাস্টার সমাজ সংসার বৈষম্যের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হতে পারেনি। পারেনি অনাথিনী রতনকে তার জীবনধারায় একাকার করে দিতে।

ইউরোপীয় সভ্যতার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে নগর পল্লীর ব্যবধান ক্রমেই বেড়ে গেছে আমাদের দেশে। এ দুইয়ের মধ্যে কোন প্রকারের হৃদয় সেতুবন্ধন সম্ভব নয়।পল্লী হৃদয়ের সঙ্গে শহরের হৃদয়ের কোন সুত্রেই বাধা পড়ে না- পোস্টমাস্টার গল্পে সেকথা আরেকটু বেশি করে মনে হয়।

তথ্যসূত্র: রবীন্দ্র ছোটগল্প সমীক্ষা, আনোয়ার পাশা; গল্পগুচ্ছ, ভূমিকা: রবিশঙ্কর মৈত্রী।

Posted in Uncategorized | Leave a comment

Hello world!

Welcome to WordPress.com! This is your very first post. Click the Edit link to modify or delete it, or start a new post. If you like, use this post to tell readers why you started this blog and what you plan to do with it.

Happy blogging!

Posted in Uncategorized | 1 Comment